ঢাকা,সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

টানা বৃষ্টিপাতে ধসের শঙ্কা, সীতাকুন্ডে বিভিন্ন পাহাড়ে ৬০ হাজার মানুষ জীবন ঝুঁকিতে

চট্রগ্রাম প্রতিনিধি ::

টানা বৃষ্টিতে পাহাড় ধসের প্রবল আশংকার মধ্যেও সীতাকু–ের বিভিন্ন পাহাড়ে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে বাস করছে ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ। প্রশাসন গত দু’দিন ধরে তাদেরকে নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং করলেও তাতে কর্ণপাত করছে না কেউ। ফলে যেকোন মুহূর্তে পাহাড় ধসে আবারো বড় রকমের প্রানহানির আশংকা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
জানা যায়, সীতাকু–ের বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বাস করেন অসংখ্য মানুষ। তবে সবচেয়ে বেশি মানুষের বাস দুর্গম জঙ্গল সলিমপুর পাহাড়ে। এখানে বাসিন্দারা মূলত দুটি সমিতির অধীন। এর একটি ছিন্নমূল সমবায় সমিতি এবং অপরটি আলীনগর সমবায় সমিতি। ছিন্নমূল সমিতির সদস্য সংখ্যা ১৩ হাজার ৯ ‘শ। এখানে যারাই প্লটের মালিক তারাই সমিতির সদস্য। প্রত্যেক পরিবারের একটি করে প্লট আছে। সে হিসেবে ছিন্নমূল সমিতির ১৩ হাজার ৯‘শ পরিবারের বাস রয়েছে। একইভাবে আলীনগর সমিতির সদস্য ৫ হাজার পরিবার। অর্থাৎ দুটি সমিতি মিলিয়ে মোট ১৮ হাজার ৯‘শ পরিবার বাস করছে। একটি পরিবারে ৫ থেকে ৭ জন সদস্য রয়েছেন। সব মিলিয়ে ১৯ হাজার পরিবারে মোট ৬০ হাজার মানুষের বসবাস। তারা সবাই পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন।

এছাড়া উপজেলার বারৈয়াঢালা, পৌরসদর, বাড়বকু-, বাঁশবাড়িয়া, কুমিরা, সোনাইছড়ি, ভাটিয়ারী ও সলিমপুর পর্যন্ত এলাকায় অন্তত ১২টি পাহাড়ে আরো ৫–৭ হাজার মানুষ বসবাস করেন। মূলত সহায় সম্বলহীন বহিরাগতরাই নানাকারণে এসব পাহাড়ে আশ্রয় নিয়ে যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছেন। বিগত দিনে পাহাড়ের এসব অবৈধ বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে অনেক চেষ্টা করেছে প্রশাসন। কিন্তু বিকল্প জায়গা না থাকায় তারা পাহাড় ছাড়তে রাজি হননি। গত বছরের ২০ জুলাই সলিমপুরে পাহাড় ধসে একই পরিবারের ৫ জন নিহত ও আরো ৪ জন আহত হয়। এর আগেও এখানে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

প্রতিবার দুর্ঘটনার পর তাদেরকে উচ্ছেদের কথা বলা হলেও কার্যত কখনোই তা কার্যকর হয়নি। এ ধরণের ঘটনার পর কিংবা টানা বৃষ্টি হতে থাকলে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সমতলে আনা হয়। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকলে তারা আবারো পাহাড়ে গিয়ে বসবাস শুরু করেন। এভাবেই মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ে অবস্থান করছেন তারা। আর সহায় সম্বলহীন মানুষের এভাবে পাহাড়ে বসবাস করার প্রবণতাকে কাজে লাগিয়ে সলিমপুরে পাহাড় নিয়ে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্যের অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

সূত্র জানায়, জঙ্গল সলিমপুর এলাকাটি সীতাকু– উপজেলাধীন হলেও ভৌগলিকভাবে এটি চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়োজিদ থানা লাগোয়া। এ কারণে ছিন্নমূল মানুষের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে যারা জঙ্গল সলিমপুরে পাহাড় কেটে বসবাসের সুবিধা পান তারা অল্পমূল্যে নিজস্ব প্লটের মালিক হন। তারপর সেখানে ঘর বানিয়ে কম খরচে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে চাকুরি কিংবা ব্যবসা বাণিজ্যে নিয়োজিত হন। এভাবে অল্পমূল্যে সরকারি পাহাড় কিনে এখানে বসবাস করছেন অনেক অবস্থাপন্ন পরিবারের মানুষও। আর সংশ্লিষ্ট সমিতিগুলো তাদের সদস্যদের পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ অন্যান্য সুবিধা প্রদানের নামে বিপুল পরিমাণ টাকা উত্তোলন করে । বলাবাহুল্য তারা প্রশাসনের যাবতীয় আইন–কানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এখানে সরকারি বিদ্যুৎ সংযোগ, পানির লাইন পর্যন্ত সরবরাহ করেছে।

যদিও গত বছর পাহাড় ধসে ৫ জনের প্রানহানির পর তৎকালীন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান তাৎক্ষণিক এসব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে অবশ্য সমিতির নেতাকর্মীরা নিজ উদ্যোগে আবারো লাইন পুনঃস্থাপন করেন বলে অভিযোগ। এদিকে এভাবেই নানা সুবিধার কারণে ঝূঁকিপূর্ণ জঙ্গল সলিমপুরেই উপজেলার সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের বসবাস। চলমান টানা বর্ষণে এই পরিবারগুলোই এখন চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। সোনাইছড়ি পাহাড়ের বাসিন্দা ত্রিপুরা সর্দার কাঞ্চন ত্রিপুরা বলেন, আসলে আমাদের সরে যাবার কোন বিকল্প জায়গা নেই। এ কারণে ঝড়–বৃষ্টি যাই হোক, যত ঝুঁকিই থাকুন না কেন পাহাড়েই থাকতে হবে। সমতলে গিয়ে কোথায় থাকব ? নিজস্ব ভূমি দিলে অবশ্যই চলে যাব।

সীতাকু–ের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. কামরুজ্জামান জানান, টানা বৃষ্টি শুরু হওয়ায় সীতাকু–ের অন্তত ১২টি পাহাড়ি স্পটে বসবাসকারী ৬০–৬৫ হাজারেরও বেশি মানুষ ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই তাদেরকে সরে আসার জন্য রবিবার থেকে উপজেলাজুড়ে মাইকিং করা হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হলো এখনো কেউ পাহাড় থেকে সমতলে নেমে আসছে না।

একই কথা জানান, বারৈয়াঢালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রেহান উদ্দিন রেহান। তিনি বলেন, আমার এলাকার পাহাড়ে প্রায় ৩’শ এর মত লোক বাস করছে। তাদেরকে সরে আসার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। চৌকিদার পাঠিয়ে ডাকা হয়েছে। কিন্তু তারা নেমে আসতে রাজি নয়। এরপরও চেষ্টা করে যাচ্ছি।

সীতাকু– উপজেলা নির্বাহী অফিসার তারিকুল আলম বলেন, যেভাবে টানা বৃষ্টি হচ্ছে যেকোন সময় পাহাড় ধস হতে পারে। এজন্য আমরা প্রত্যেকটি ইউনিয়ন পরিষদকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছি। পাহাড়ের বাসিন্দাদের সমতলে নিরাপদ আশ্রয়ে আসতে মাইকিং করছি। কিন্তু এখনো পর্যন্ত একজনও নেমে আসেনি।

পাঠকের মতামত: